প্রকাশিত: Tue, Dec 20, 2022 3:55 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 2:31 PM

বিএনপির ২৭ দফা বিবেচনা করবে সরকার, পর্যালোচনা করছে বামজোট

ভূঁইয়া আশিক রহমান : ??‘?রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত’ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। সোমবার ২৭ দফার এই রূপরেখা ঘোষণা করা হয়। যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণার আট দিনের মাথায় এ রূপরেখা দিলো দলটি। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন গড়তে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা সংলাপ করে এটি চূড়ান্ত করা হয়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপির সাতাশ দফার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ২০ ডিসেম্বর সকালে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত খাদ্য উপ কমিটির প্রস্তুতি সভায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২৭ দফা বিএনপির স্ট্যান্টবাজি। তারা রাষ্ট্রকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলো, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ মাধ্যমে উন্নয়ন সাধন করেছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি বিএনপির সাতাশ দফা রূপরেখায় কোনো নতুনত্ব দেখছেন না বলে জানিয়েছেন। আমাদের নতুন সময়কে তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার তো আমরা করে চলেছি। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার সবকিছুরই উন্নতি হয়েছে। যা বিশ^ কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে। ফলে বিএনপি সাতাশ দফায় যা যা বলেছে, তাতে নতুন কোনো কিছু নেই। বরং অনেক ক্ষেত্রে বিএনপির শাসনামলে দেশের খারাপ অবস্থা দেখেছি। তবুও বিএনপি যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছে, সরকার তা বিবেচনা করবে। কারণ দেশকে আমরা ভালোবাসি। 

বাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা পর্যালোচনা করছি। নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে আমরা আমাদের মতামত ব্যক্ত করবো। তবে তারা যে সাতাশ দফা প্রস্তাব দিয়েছে, সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। 

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বামজোট তো সুনির্দিষ্ট কিছু দফা বা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। এ ব্যাপারে বিএনপির প্রতিক্রিয়া আগে নিন, তারপর সাতাশ দফা নিয়ে কথা বলবো। আমাদের দফাগুলো নিয়ে তো বিএনপির প্রতিক্রিয়া আমরা জানি না। 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বিএনপির সাতাশ দফায় নতুনত্ব আছে। অনেক সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও এর মধ্যে আছে। আমরা অনেক প্রশ্ন তুলেছি, যার কিছু আছে, আবার অনেকগুলো সাতাশ দফায় নেই। কিন্তু দফাগুলো যখন জাতীয় আলোচনার বিষয় হবে, তখন এর মধ্যদিয়ে কোন কোন জায়গায় সুনির্দিষ্টভাবে রূপান্তর দরকার, সেগুলো আরও সুনির্দিষ্ট করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে যাওয়া সম্ভব। সবচেয়ে ইতিবাচক ব্যাপার হচ্ছে, সংবিধান সংস্কার করে রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক রূপান্তর, ক্ষমতা কাঠামোর রূপান্তর এখন রাজনীতির প্রধান এজেন্ডা। 

ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিএনপিকে ধন্যবাদ যে, তারা নির্বাচনে কী করতে চায়Ñ সেই রূপরেখা তুলে ধরেছেন সাতাশ দফার দাবির মধ্যদিয়ে। এই রূপরেখা নাগরিকেরা আশ^স্ত হবেন কিনা জানি না। তবে আমি আশ^স্ত নই। কারণ বিএনপি বা জাতীয় পার্টি দুটিই অবৈধ দল। দুটিরই যে রেকর্ড আছে, তাতে রাষ্ট্রকাঠামোকে ধ্বংস করার রেকর্ড আছে। এখন বিএনপি যদি রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের দাবি তোলে, তখন সেটা আমার বিশ^াসে-আস্থায় নিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, তবে সাতাশ দফার দাবির যৌক্তিতা অস্বীকার করতে পারছি না। যেমন তারা বলেছেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বেশি নয়। এই অবস্থান ও যথার্থ। কিন্তু তারা আবার নির্বাচন কমিশনের জন্য আইন করতে চাচ্ছেন। এটা আমার কাছে বোধগম্য নয়। সংবিধানের ১১৮/১ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে আইনের মাধ্যমে। যে ক্ষেত্রে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউ কোনো কথা বলছে না। নির্বাচন যদি নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইনের অধীনে গঠিত হয়, তাহলেই দেশের রাজনীতিতে সিংহভাগ সমস্যা কমে যাবে। সব মিলিয়ে বিএনপির সাতাশ দফা দাবিকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছি না। কারণ যে পাত্রে আহারগুলো আছে সে পাত্রই প্রশ্নবিদ্ধ। আহারগুলো লোভনীয় হলেও পাত্রটি প্রশ্নবিদ্ধ। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব